মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে হিজবুল্লাহ নেতা শুকুর ও হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার হত্যাকাণ্ডের পর। বিশ্লেষকদের মতে, এ দুটি হত্যাকাণ্ডে সংগঠনগুলোর মধ্যে চরমপন্থিদের গুরুত্ব বাড়বে, ফলে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও তীব্র হতে পারে। এদিকে, ইসরায়েল দাবি করেছে যে হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফও তাদের অভিযানে নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার ইসরায়েল ঘোষণা করেছে যে তারা লেবাননের রাজধানী বৈরুতে হিজবুল্লাহ কমান্ডার শুকুরকে হত্যা করেছে। ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী, শুকুর ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত গোলান হাইটসে আক্রমণের পেছনে ছিলেন, যা ১২ শিশুর মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। বুধবার হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া ইরানে মৃত্যুবরণ করেছেন। গত বছর ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ করে, যার পর ইসরায়েল হানিয়াকে ‘টার্গেট’ ঘোষণা করেছিল। তবে হানিয়ার মৃত্যু নিয়ে ইসরায়েল কোনো মন্তব্য করেনি।
হানিয়ার মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায়, হামাসের সশস্ত্র শাখা তীব্র প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে। এছাড়া, ইসরায়েল দাবি করেছে যে হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফও ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট দেইফের মৃত্যুকে ‘উল্লেখযোগ্য মাইলফলক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তেহরানে হানিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে লাখো মানুষ অংশ নেন। জানাজার পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইসরায়েলে সরাসরি হামলার নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় ইরানের রাজধানী তেহরানে প্রচুর শোকযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের দাবি করা হয়। হানিয়ার মরদেহ দাফনের জন্য কাতারের রাজধানী দোহায় নিয়ে যাওয়া হবে।
ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশনসের মধ্যপ্রাচ্য-গবেষক কেলি পেটিলো বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডগুলোর প্রভাব গোটা অঞ্চলে পড়বে। তিনি বলেন, হানিয়ার মৃত্যুর পর ইসরায়েল হামাসের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে ধ্বংস করেছে, যা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করতে পারে।
জেরুজালেমে হিব্রু ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সাইমন উলফগ্যাং বলেছেন, হানিয়ার মৃত্যু বন্দিমুক্তি আলোচনা ও অন্যান্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। হিজবুল্লাহ ও ইরানও এই হত্যাকাণ্ডগুলোর প্রতিক্রিয়া হিসেবে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত বৃদ্ধি পাবে এবং ইরান নিজেকে প্রতিক্রিয়া জানানোর অবস্থানে রাখবে। ইরানের মাটিতে হানিয়ার হত্যাকাণ্ড ইরানের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষত নতুন প্রেসিডেন্টের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের সময় এটি ঘটে যাওয়ায়।
—ডয়চেভেলে ও আলজাজিরা